নিজের কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা নির্দিষ্ট কোন একটি স্থানে বিনিয়োগ করে মেয়াদ পূর্তির সময় সুদ সহ মোটা টাকা লাভ করতে চান প্রতিটি মানুষ।(Post Office Scheme) বর্তমানে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকলেও অনেকেই আজও অর্থ নিয়োগের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পোস্ট অফিসের উপরেই ভরসা রাখতে পছন্দ করেন। পোস্ট অফিসও গ্রাহকদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু স্কিম চালু করে রেখেছে যার মাধ্যমে সমাজের সমস্ত ধরনের মানুষ উপকৃত হন। আজ এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পোস্ট অফিসের সেরা কয়েকটি স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানাবো।
১) ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা NSC:
পোস্ট অফিসের পরিচালিত অধিক জনপ্রিয় স্কিম গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো এই ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট স্কিম। পোস্ট অফিসের এই জনপ্রিয় সরকারি স্কিমটিতে অর্থ বিনিয়োগ করে গ্রাহকরা কোনো রকম ঝুঁকি ছাড়াই সঞ্চয় করা অর্থের উপর ভালো পরিমাণ সুদ লাভ করেন। এর আগে পোস্ট অফিসের তরফ থেকে গ্রাহকদের এই স্কিমের জন্য ৭ শতাংশ করে সুদ দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে সেই পরিমাণটি বাড়িয়ে ৭.৭ শতাংশ করা হয়েছে। এটি পোস্ট অফিসের একটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প। তবে পোস্ট অফিসের তরফ থেকে এতে সর্বোচ্চ অর্থ বিনিয়োগের কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। একজন ব্যাক্তি এই স্কিমের মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্টে খুলতে পারেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই স্কিমে আয়কর আইনের 80C ধারার অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়।
২) পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা PFF:
বর্তমান যুগে অর্থ বিনিয়োগকারীদের কাছে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিমটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গ্রাহক যে কোনো নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিমের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। বর্তমানে পোস্ট অফিসের তরফ থেকে এই স্কিমে ৭.১ শতাংশ সুদ দেওয়া হচ্ছে। এই স্কিমের অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন অর্থ বিনিয়োগকারী ব্যক্তি। এই স্কিমের মোট মেয়াদ হলো ১৫ বছর।
৩) সেভিংস অ্যাকাউন্ট:
পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমেও অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করলে বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদ এর সুবিধা লাভ করা সম্ভব হয়। পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করার নূন্যতম সীমা হল ৫০০ টাকা। এই পরিমাণ টাকা গ্রাহককে তার অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স হিসাবে রাখতেই হবে। অন্যথায় আর্থিক বছরের শেষে পোস্ট অফিসের তরফ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ফি হিসেবে ৫০ টাকা কেটে নেওয়া হবে।
৪) সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা বা SSY:
কন্যা সন্তানের জন্য অর্ধ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিম হিসেবে বিবেচিত হয় এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পটি। পোস্ট অফিসের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পটি চালু হবার পর থেকেই তা জনগণের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করে নিজের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চান অভিভাবকরা। পোস্ট অফিসের তরফ থেকে এই স্কিমের জন্য বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ এর সুবিধা প্রদান করা হয়। এই স্কিমে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব।
৫) কিষান বিকাশ পত্র বা KVP:
পোস্ট অফিসের একটি জনপ্রিয় ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প হলো কিষান বিকাশ পত্র। এই প্রকল্পটি বিশেষ ভাবে চালু করা হয়েছে দেশের কৃষকদের জন্য। তবে কৃষক না হলেও এতে অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। আবার একজন ব্যাক্তি এই স্কিমে একাধিক অ্যাকাউন্টও খুলতে পারে। বর্তমানে এই স্কিমের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ করলে গ্রাহকরা ৭.৫ শতাংশ হারে সুদের সুবিধা লাভ করবেন। এখানে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা বিনিয়োগ শুরু করা যায়। তবে এখানে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। তবে বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ১০০ এর গুণিতক হিসাবে হতে হয় এই স্কিমের ক্ষেত্রে।